মিজবাউল হক, চকরিয়া :
চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বিপদসীমা থেকে নেমে এসেছে মাতামুহুরী নদীর পানি। তবে পানি কমে যাওয়ায় ভাঙ্গতে শুরু করেছে নদীর দু’কুল। নদী গর্ভে বিলিন হচ্ছে বাড়ি-ঘর। এরমধ্যে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ন হয়ে উঠেছে চকরিয়া পৌরশহরের ঘুনিয়া পয়েন্টের বাঁধটি। যে কোন মুহুর্তে বন্যার পানির তোড়ে বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে দিগরপানখালী এলাকায় হাজার হাজার মানুষ বাঁধ রক্ষার দাবীতে বিক্ষোভ করেছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, গত চারদিনের ভারিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ ৯টি ওয়ার্ডে ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বানবাসি মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠে বিভিন্ন আশ্রয়ণ কেন্দ্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে অবস্থান করছেন ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ। এবারের বন্যায় অন্তত ৫০টি ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। কৃষকের বীজতলা শাক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। গত তিনদিন ধরে বানবাসি মানুষ বন্যার পানিতে বন্দি থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। বিপদসীমা থেকে কমে এসেছে বন্যার পানি। তবে উজানে ভারিবর্ষণ কমে গেলে বন্যার পানি অনেকটা কমে যাবে বলে জানান স্থানীয় লোকজন।
এদিকে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন চকরিয়া পৌরবাসি ও ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নের মানুষ। মাতামুুরী নদীর পানি কমে যাওয়ায় ভাঙ্গতে শুরু করেছে নদীর দু’কুল। নদীর দু’কুল ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঘুনিয়া-দিগরপানখালী রক্ষা বাঁধটি। পানির গতিবেগ সরাসরি বাঁধের সাথে ধাক্কা লাগায় আরও বেশি ঝুকিপূর্ন হয়ে উঠেছে। প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে এক কিলোমিটার এলাকা নদীর নিকটে চলে এসেছে। বন্যার পানির তোড়ে বাধটি ভেঙ্গে গেলে হাজার হাজার ঘর-বাড়ি ভেসে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। পৌরসভা ও ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নের অন্তুত ৫০ হাজার মানুষ ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গত তিনদিন ধরে বাধটি রক্ষার জন্য রাতদিন পাহারা দিচ্ছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। গতকাল বিকাল তিনটার দিকে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাধের ঝুকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বাঁধটির বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষক করে প্রাথমিকভাবে স্পার দিয়ে রক্ষার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বন্যার পানি কমে গেলে স্থায়ী সমাধানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
চকরিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, দিগরপানখালী-ঘুনিয়া রক্ষা বাধটি বন্যার পানির তোড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে আতঙ্কে রয়েছে বানবাসি মানুষ। এরমধ্যে তার ওয়ার্ডের মানুষের সহযোগিতায় বাধটি রক্ষার চেষ্ঠায় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ার সাংসদ মৌলভী ইলিয়াছ তার অনুগত ঠিকাদার দিয়ে বাধের কাজ করতে গিয়ে চরম অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। যথাসময়ে বাধটি নির্মাণ করেনি। ২৩ হাজার সিসি ব্লক দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ১৭ হাজার ব্লক দিয়ে তড়িগড়ি করে শেষ করেছেন। এতে বাঁধ নির্মাণের বড়ধরণের পুকুর করেছেন বলে জানান কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম।
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁশিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তার ইউনিয়নের মানুষ অধিক ঝুকিপূর্নে বসবাস করছেন। এ বাধটি ছিড়ে যাওয়ার ভয়ে নির্ঘুন রাত কাটাচ্ছেন। দ্রুত সময়ে বাধটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে পৌরবাসী ও ফাঁশিয়াখালী বাসীকে রক্ষার দাবী জানান। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সাংসদ বাধটি নির্মাণে চরম অবহেলা এবং অনিয়ম করেছেন। এখানে যথাসময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করলে হয়তো রক্ষা করা যেতো বাধটি।
চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানান, শুধু ৯নং ওয়ার্ড ঝুকিপূর্ন নয় পৌরসভার মানুষ ভয়ে রয়েছেন। ছিড়ে যাওয়ার ভয়ে আতঙ্কের মধ্যে রাতযাপন করছেন। ইতোমধ্যে বেশকিছু বালির বস্তা দেয়া হয়েছে। বাধটি রক্ষার জন্য সব ধরণের চেষ্ঠা চলছে বলে তিনি জানান।
চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম এমএ বলেন, বাধটি রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে উর্ধ্বতন মহলে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসন মিলে সবধরণের চেষ্ঠা বাধটি রক্ষার জন্য।
পাঠকের মতামত: